শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
লালমনিরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে নির্বাচিত হলেন যাঁরা! সার সিন্ডিকেট হোতারা ধোঁয়া ছোঁয়ার বাহিরে কেন লালমনিরহাটে তামাকের বিষে কমছে জমির ঊর্বরতা; বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি লালমনিরহাটে জেন্ডার-সংবেদনশীল দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে আত্মনির্ভরশীল দল এবং ইউডিএমসি এর মধ্যে অ্যাডভোকেসি এবং লবিং মিটিং অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত পাটগ্রামে শহীদ জিয়া স্মৃতি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র আমাদের হাতের নাগালে নাই-লালমনিরহাটে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় লালমনিরহাটে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ও ঔষধ সেবা অর্ধেক মূল্যে হত দরিদ্রদের ছানি অপারেশন অরবিট চক্ষু হাসপাতালে লালমনিরহাটে শীতের হরেক রকমের পিঠার দোকানের পসরা নিয়ে বসছেন বিক্রেতারা
ভাটিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় ও কিছু কথা

ভাটিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় ও কিছু কথা

স্মৃতি চারণ:
ভাটিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত আজকের বিদায় অনুষ্ঠানের সম্মানীত সভাপতি, জনাব মোঃ হাবিবুর রহমান হাবিব, সভাপতি, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি ও চেয়ারম্যান, ১নং মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদ, শ্রদ্ধাভাজন প্রধান অতিথি, জনাব মোঃ কামরুজ্জামান সুজন, চেয়ারম্যান, সদর উপজেলা পরিষদ, লালমনিরহাট, বিশেষ অতিথি জনাব লিপিকা দত্ত, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, সদর, লালমনিরহাট, মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথীবৃন্দ, অভিভাবকগণ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সহকর্মীবৃন্দ, আমাকে ভালোবেসে উপস্থিত প্রাক্তন ছাত্র/ছাত্রী ও অধ্যায়নরত প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থী বৃন্দ। সকলের প্রতি রইল ছালাম, আদাব ও হৃদয়ের অর্ন্তরস্থল থেকে গভীর ভালোবাসা।
সম্মানীত সুধী আজ এই বিদায়ক্ষণে হৃদয়ের গভীর থেকে অনেক স্মৃতি ভেসে আসছে, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা লগ্নে ভাটিবাড়ী নবারুন যুব সংঘ নামে একটি সংগঠন ছিল। ঐ সংগঠনের উদ্যোগে অত্র এলাকার সর্বসাধারণের সহযোগিতায় এই বিদ্যালয়টি ১৯৮৪ খ্রি. প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অত্র এলাকার সুধীজন যখন বিদ্যালয় নির্মানে কঠিন পরিশ্রম শুরু করে তখন আমি ছিলাম তাদের কর্মের সাথী এবং কাঁধে নিয়েছিলাম শিক্ষকতা।
আমার এই বিদায়ক্ষণে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লগ্নে এমন কয়েকজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন তাদের মেধা ও কাজের দক্ষতা আমার আজও মনে আছে। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অত্র বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম মীর দরবেশ আলী সাহেব। তিনি প্রতিদিন সকালে আসতেন বলতেন নুরনবী, সাহেব আলী, শোভা কান্ত রায় তোমরা এসেছো, তাহলে বসো। নুরনবী তুমি ক্যাশবহি ধর, সাহেব আলী তুমি রেজুলেশন ধর, শোভা কান্ত তুমি ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি রেজিষ্টার বহি ঠিক কর। তার অগাত মেধা শক্তি ও অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়। তার কাজকে শক্তিশালী ও বেগবান করার জন্য আরও কয়েকজন ব্যক্তিত্বের মধ্যে অন্যতম ছিল প্রয়াত মরহুম কেরামত আলী সরকার, মরহুম আনছার আলী কাছু, মরহুম আবেদ আলী, মরহুম খোয়াজুর রহমান, মরহুম আবুল কাশেম শিক্ষক ও বিশেষ করে আরও একজন অন্যতম ব্যক্তি ছিলেন তিনি প্রায়াত ডাঃ রোহিনী কুমার রায়। আমার মনে আছে তিনি বলতেন, দরবেশ মিয়া, বিদ্যালয়ের কাজের অগ্রগতি কতদুর, কোথায়ও কোন সমস্যা হয়েছে কিনা, সমস্যা হলে বলবেন আমি সেটা দেখব।
আরো স্বরণ করছি অত্র বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক প্ৰায়াত মরহুম নুরন নবী সাহেব কেও। তার নিরলস কর্মপ্রচেষ্ঠা, ধর্য্য ও সততায় এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। আমি সকলকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি ও আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাদেরকে জান্নাত বাসী করুন। আর যারা বেচে আছেন তাদের দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
সুধীবৃন্দ এ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় এসে আমি যথাসাধ্য দায়িত্ব পালন করার চেষ্ঠা করেছি। বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে কখনও সকাল থেকে সন্ধ্যা, আবার কখনও সকাল থেকে সন্ধ্যা, আবার কখনও গভীর রাত পর্যন্ত বিদ্যালয়ের অফিসিয়াল কাজ করেছি। বিদ্যালয়টিকে নিজের জীবনতুল্য ভালোবেসেছি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরদেরকেও সন্তানতুল্য আদর করেছি। কখনও মনে হয় নাই এ বিদ্যালয় ছেড়ে আমাকে বিদায় নিতে হবে। নিয়তির নির্মম নিয়মে আমাকে বিদায় নিতে হচ্ছে। তাই করুন সূরে বলতে হচ্ছে “বিদায় দাওগো বন্ধু তোমরা-এবার দাও বিদায়”।
সম্মানীত সুধী প্রতিটি বিদায়ই বেদনার। এই বেদনা বিধুর বিদায় লগ্নে মনে জাগছে অফুরন্ত স্মৃতি। সুদীর্ঘ সময়ে প্রান প্রিয় শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ এবং সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের সাথে আমার হৃদ্যতার যে নিবিড় গ্রন্থটি রচিত হয়েছিল, তা আজ ছিন্ন হয়ে আমার হৃদয়কে ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে। তবুও এই বিদায়ের মাঝে সুখকর বিষয় আছে তা হলো এই বিদ্যালয়েরই ছাত্র/ছাত্রীদের মধ্যে আমার হাতে গড়া কয়েকজন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় কর্মরত আছেন, সহপ্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক কমল চন্দ্র রায়, অঞ্জলী রাণী ও অফিস সহকারী মোঃ মফিজুর রহমান।
তাছাড়াও স্মৃতি থাকল প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মরহুম নুরননবী সহেবের সহযোগিতায় কর্মরত কর্মচারী আব্দুর রশিদকে সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ের ভবনের পিছনে কয়েকটি মেহগনীর গাছ নিজ হাতে রোপন করি। যা বিদ্যালয়ের ভবিষ্যত তহবিল গঠনের সহায়ক হয়ে আছে।
সুধী মন্ডলী আমি অত্র বিদ্যালয়ে গত ০৮/০১/১৯৮৪ খ্রি. তারিখে শিক্ষকতা পেশায় যোগ করেছিলাম। আমার সুদীর্ঘ কর্ম জীবনে যদি কোন দোষ করে থাকি কোন ভুল করে থাকি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন আমার জন্য দোয়া করবেন।
আজকের এ বিদায় দিনে আমাকে অত্যন্ত ভালো লাগছে যে আপনারা সকলে আমাকে ভালোবেসে এত বড় বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। এজন্য বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক মন্ডলী ও শিক্ষার্থী বৃন্দকে জানাই অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে প্রাক্তন এবং অধ্যায়রত ছাত্র/ছাত্রীরা তোমাদের এ ভালোবাসা ও আন্তরিকতা আমি সহ সকল শিক্ষকগণ কৃতজ্ঞতার সাথে স্বরন রাখব এবং দোয়া করব।
উপস্থিত সকলের জন্য মহান আল্লাহ কাছে দোয়া করি তিনি যেন সকলের মঙ্গল করেন, সুখ ও শান্তিময় জীবন দান করেন।
উপস্থিত সুধী, পরিশেষে এটাই বলতে চাই এই বিদ্যালয়ের সাথে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সতীর্থদের সাথে আমার এমন প্রীতিময় নিবিড় বন্ধন তৈরি হয়েছিল যে, আজ সেই বন্ধন ছিন্ন করতে বার বার অশ্রুশিক্ত হয়ে উঠছি। তবুও নিয়মের তাগিদে সেই বন্ধন যেন ছিন্ন হয়ে যায়। আমাকে চলে যেতে হচ্ছে। তাই যাওয়ার আগে আবারো সবাইকে প্রাণঢানা শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানানোর মধ্য দিয়ে আমি সকলের ভালোবাসা ও দোয়া কামনা করছি। আমাকে সকলেই দোয়া করবেন আমার অবসর জীবন যেন সুস্থ্য ও শান্তিতে কাটাতে পারি।
সকলকে ধন্যবাদ, আসসালামু আলাইকুম। আল্লাহ হাফেজ।
(লেখকঃ মোঃ সাহেব আলী, সহকারী শিক্ষক, ভাটিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, লালমনিরহাট।)
★ “ভাটিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জনাব মোঃ সাহেব আলী সাহেব-এঁর অবসর জনিত বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান” এ পঠিত লিখিত বক্তব্যটি হুবহু পাঠকের কাছে তুলে ধরা হলো।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone